SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দু ধর্ম শিক্ষা - পূজা-পার্বণ, মন্দির ও তীর্থক্ষেত্র | NCTB BOOK

মন্দিরে দেবতার পুজো করা হয়। এজন্য মন্দিরকে বলা হয় দেবালয়। দেবদেবীর নাম অনুসারে মন্দিরের নাম হয়ে থাকে। যেমন - কালী মন্দির, দুর্গা মান্দির, শিব মন্দির, আদিনাথ মন্দির, লক্ষ্মী মন্দির, কান্তজী মন্দির, কৃষ্ণ মন্দির, বিষ্ণু মন্দির ইত্যাদি। আবার স্থানের নাম অনুসারেও মন্দিরের নাম হয়ে থাকে। যেমন - ঢাকেশ্বরী মন্দির, রমনা মন্দির ইত্যাদি। অনেক জায়গায় এসব মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক সাধুসঙ্ঘ। তাঁদের আবাসস্থল। বিভিন্ন আশ্রম। সাধুদের লীলাক্ষেত্র বা বিচরণক্ষেত্রগুলো সবই পুণ্যক্ষেত্র। এই পুণ্যক্ষেত্রগুলো আবার তীর্থক্ষেত্র হিসেবেও পরিচিত। সকল মন্দির ও তীর্থক্ষেত্রে গেলে মন ভালো হয়। পবিত্রতা বেড়ে যায়। মনে আসে প্রশান্তি। এগুলো আমাদের ঐতিহ্যও বটে। আমরা এখন দুটি মন্দির ও দুটি তীর্থক্ষেত্র সম্পর্কে জানব।

কান্তজী মন্দির

কান্তজী মন্দির বা কান্তজিউ মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুরে ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিতি। এটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মন্দির। বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন রয়েছে এ মন্দিরে। ১৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন স্থানীয় রাজা প্রাণনাথ রায় মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পালিত সন্তান রাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। দীর্ঘ ৪৮ বছর শতাধিক শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই কান্তজীর মন্দির। মন্দিরের বাইরে পুরো দেয়াল জুড়ে টেরাকোটার টালিতে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনির চিত্রায়ণ। এ কারণেই এ কান্তজির মন্দিরটি বাংলার স্থাপত্যশিল্প বৈশিষ্ট্যে অন্যতম। শ্রীকৃষ্ণের কাহিনিসমূহকে এখানে জনসাধারণের জীবনের মতো চিত্রায়িত করা হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পৌরাণিক ঘটনা। পৌরাণিক কাহিনির লৌকিক উপস্থাপনে তাই কারিগরদের সৃজনশীলতা ও দক্ষতার এক অনন্য নিদর্শন এই কান্তজীর মন্দির।

কান্তজীর মন্দিরের দেওয়ালের ওপর পোড়ামাটির এ বিশাল অলংকরণ সে সময়ের জীব ও প্রাণশক্তিরই প্রকাশ এবং হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের পলিময় মাটিতে লালিত শক্তির ভেতর থেকেই এ শিল্প বেড়ে উঠেছিল।

এখানে রাধা-কৃষ্ণের পূজার পাশাপাশি প্রতি বছর মহাসমারোহে কার্তিক মাসের রাস পূর্ণিমায় রাস উৎসব হয়। ভগবানের আরাধনা ও পুণ্য লাভ করতে ভক্তরা এখানে আসেন। বহু বছর ধরে হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য হিসেবে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ হচ্ছে এই রাসমেলা।

আদিনাথ মন্দির

বাংলাদেশের বিখ্যাত মন্দিরগুলোর মধ্যে আদিনাথ মন্দির অন্যতম। এটি কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত দ্বীপ মহেশখালিতে অবস্থিত। দেবাদিদেব মহাদেবের নামানুসারে এ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে এটি শিব মন্দির নামেও পরিচিত। এ মন্দিরটি মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। আদিনাথের অপর নাম মহেশ। মহেশের নামানুকরণে এ জনপদের নামকরণ করা হয় মহেশখালি। অধিকাংশ প্রাচীন মন্দির এবং তীর্থস্থান নিয়ে আছে অনেক পুরাণকথা, লোককথা। যেখানে ইতিহাস পাওয়া যায় না, সেখানে লোককথার ওপর নির্ভর করতে হয়। এখানেও লোককথা থেকে এ মন্দিরটি সম্পর্কে জানা যায়।

Content added By